Top NewsEXCLUSIVE: নারায়ণগড়ের বাখরাবাদে রেল লাইনের পাশ থেকে যুবকের মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায়, গ্রেফতার...

EXCLUSIVE: নারায়ণগড়ের বাখরাবাদে রেল লাইনের পাশ থেকে যুবকের মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায়, গ্রেফতার স্ত্রী

SBN NEWS:  নিজের শোকাতুর চেহারা তুলে ধরে বিভ্রান্তিমূলক কথাবার্তা বলেও শেষ রক্ষা হল না। অবশেষে স্বামীকে খুনের ঘটনায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হতে হল খুন হয়ে যাওয়া হাসিবুল রহমানের স্ত্রীকে। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে স্বামীকে খুন করে এখন রেল পুলিশের হেফাজতে ২৫ বছরের মুক্তরা বিবি। বাড়ি খড়গপুর গ্ৰামীণ থানার সাঁকোয়া গ্ৰাম পঞ্চায়েতের আরুনখাগরা গ্ৰামে। শনিবার বিকালে তাঁকে খড়গপুর জিআরপি থানায় ডেকে পাঠিয়ে দীর্ঘ চার ঘণ্টা জেরার পর রাতে গ্ৰেফতার করা হয়। তারসাথে রবিবার বিকালে গ্ৰেফতার করা হয়েছে ধৃত মহিলার প্রেমিক ও তাঁর এক সাগরেদকে। রেল পুলিশ জানিয়েছে বাকি দুই ধৃত হলেন রীতেশ রানা (২৭) ও সনাতন পাতর(৪৬)।

প্রথম জনের বাড়ি নারায়ণগড় থানার কাশিপুর গ্ৰাম পঞ্চায়েতের বাগরুই গ্ৰামে। অপরজনের বাড়ি বেলদা বাখরাবাদ গ্ৰাম পঞ্চায়েতের তেগেড়িয়া গ্ৰামে। বাখরাবাদ স্টেশনের কাছে এই তেগেড়িয়া এলাকায় একটি রেলগেটের কাছে রেললাইনের উপর থেকে শুক্রবার ভোররাতে খড়গপুর গ্ৰামীণ থানার সাঁকোয়া গ্ৰাম পঞ্চায়েতের আরুনখাগরা গ্ৰামের যুবক হাসিবুল রহমানের দ্বি খন্ডিত মৃতদেহ উদ্ধার হয়। এদিকে রবিবার খড়গপুর জিআরপি মৃত যুবকের স্ত্রী মুক্তারা বিবিকে খড়গপুর এসিজেএম আদালতে হাজির করে।‌বিচারকের নির্দেশে ধৃত মহিলার চারদিনের পুলিশ হেফাজত হয়েছে। আর ধৃত মহিলার প্রেমিক ও তাঁর বন্ধুকে সোমবার আদালতে হাজির করা হবে বলে জানা গিয়েছে। এই ব্যাপারে এসআরপি খড়গপুর দেবশ্রী স্যান্যাল বলেছেন ” মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় মৃতের স্ত্রীকে গ্ৰেফতার করা হয়েছে। তারসাথে রবিবার বিকালে ধৃত মহিলার প্রেমিক ও তাঁর এক বন্ধুকে গ্ৰেফতার করা হয়েছে। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে এই খুন।” শুক্রবার ভোররাতে বাখরাবাদ স্টেশনের কাছে তেগেড়িয়া এলাকায় রেলগেটের কাছে রেললাইনের উপর থেকে দ্বি খন্ডিত বস্তা বন্দী অবস্থায় দ্বি খন্ডিত মৃতদেহ উদ্ধার হয় ২৯ বছরের হাসিবুল রহমানের। তারপর স্বতপ্রণোথিতভাবে একটি খুনের মামলা দায়ের করে খড়গপুর জিআরপি ঘটনার তদন্তে নামে। তদন্তে নেমে তদন্তকারী আধিকারিক জানতে পারেন ১৭ জানুয়ারি রাতে বাড়িতেই হাসিবুলকে মদ্যপ অবস্থায় খুন করা হয়। আর সেই খুনের ঘটনায় প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল মৃতের স্ত্রী ও তাঁর প্রেমিক রীতেশ রানার। তারপর মৃতদেহ কম্বল বন্দী করে একদিন বাড়ির এক কোণে রেখে দেওয়া হয়। পরের দিন রাতে বৃষ্টির সুযোগ নিয়ে রীতেশ কম্বলে মোড়া মৃতদেহটি একটি বস্তায় পুড়ে বেরিয়ে যায়। ডেকে নেয় বন্ধু সনাতনকে। রফা হয় ৪০ হাজার টাকা বাখরাবাদ স্টেশনের কাছে রেললাইনে ফেলার জন্য। আর এই টাকা দেওয়ার জন্য রীতেশ বেলদায় হাসিবুলের মোটরবাইকটি বন্ধক রাখে। তারপর দুজনে মিলে প্রথমে পোক্তাপোলে কেলেঘাই নদীর জলে ফেলার চেষ্টা করে। কিন্তু সফল না হতে পেরে শেষে বাখরাবাদ স্টেশনের কাছে রেললাইনের উপর ফেলে পালায়। কিন্তু কেন এই খুন? জিআরপি সূত্রে জানা গিয়েছে হাসিবুল আগে খড়গপুর গ্ৰামীণ এলাকায় একটি কারখানায় কাজ করতেন। পরে তাঁর চাকরি চলে যায়। লোককে চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা পয়সা নিত। কিন্তু কাউকে চাকরি করে দিতে পারেন নি। ফলে সকলেই ওই টাকা ফেরত চাওয়ার জন্য বাড়িতে যেতেন। তখন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য হাসিবুল খড়গপুর গ্ৰামীণ থানার মাদপুর এলাকায় একটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক থেকে ২ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা ধার নেন। সেই সময় তাঁর সাথে পরিচয় হয় রীতেশ রানার। এদিকে ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া ধারের টাকা ফেরত না দেওয়ার ফন্দি আঁটেন হাসিবুল। তখন তিনি রিতেশকে বাড়িতে ডাকতেন। আর স্ত্রী মুক্তারাকে চাপ দিতেন রীতেশের সঙ্গে লীলাখেলায় মেতে ওঠার জন্য। কিন্তু মুক্তারা বিবি রাজী হতেন না। তখন স্ত্রীকে হাসিবুল মারধর করতেন। বিষয়টি জানতে পারে রীতেশ। তারপর থেকেই রীতেশের সঙ্গে মুক্তারা বিবির একটি বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু এই পরকীয়ার সম্পর্ক পরে জেনে যায় হাসিবুল। ফলে পথের কাঁটা সরানোর উদ্দেশ্যে এই খুন। এদিকে বোনের এই কান্ডে রীতিমতো মুষড়ে পড়েছেন দাদা আজিজুল মির্জা। তিনি বললেন ” দুজনে ভালোবাসা করে বিয়ে করেছিল। কোনও ঝগড়া বিবাদ ছিল না। কিন্তু পরে কিছু বিষয় নিয়ে অশান্তি হচ্ছিল। যেটা আমাদেরকে বলে নি। পুলিশের সামনেই বলেছে।” অপরদিকে মৃতের কাকা খড়গপুর দুই নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি, সেচ ও সমবায় কর্মাধ্যক্ষ আনিসুর রহমান বললেন ” আমরা ভাবতে পারছি না আমাদের বৌমা এরকম কাজ করতে পারে। আমরা সকল দোষীদের শাস্তি চাইছি।”