মেদিনীপুরঃ তারস্বরে মাইক আর ব্যংচিত্রের মাধ্যমে রাজনোইতিক নেতা,নেত্রী, মন্ত্রী আমলাদের আক্রমণের মাধ্যমে নানা ঘটনা তুলে ধরাই ছিল, মেদিনীপুর কলেজ রোডের সরস্বতী পুজোর বিশেষত্ব। কার্টুন চিত্রের মাধ্যমে ব্যঙ্গবিদ্রুপ, আক্রমন-পাল্টা আক্রমন আজও আছে। কিন্তু নেই মাইকের শব্দ। একাবেরে অ-মাইক পুজো। একটি মণ্ডপেও মাইক নেই। এবার মেদিনীপুর কলেজ রোডের সরস্বতী পুজোয় উঠে এলো, সাম্প্রতিক নানা ঘটনাবলি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন জনমুখি প্রকল্প থেকে রাম মন্দির উদ্বোধন। সন্দেশখালির ঘটনা থেকে থেকে রাহুল গান্ধীর ভারত জোড় ন্যায় যাত্রা। ব্যাঙ্গচিত্রের মাধ্যমে একে অপরকে আক্রমন করতে ছাড়েনি পুজো উদ্যোক্তারা।
মূলত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছাত্র-যুবরাই এমন পুজোর হোতা। রাজ্যের মধ্যে ব্যতিক্রমী সরস্বতী পুজো! বছরের পর বছর ধরে এভাবেই হয়ে আসছে মেদিনীপুরের সরস্বতী পুজো। উপভোগও করছেন মানুষজন। সকাল থেকে রাত্রি হাজার হাজার মানূষের ভিড় মেদিনীপুরের কলেজ রোডে। উল্লেখ্য, মেদিনীপুরের সরস্বতী পুজো মানেই ব্যাতিক্রমি পুজো। ব্যঙ্গচিত্র, রাজনৈতিক কূটকচালির মাধ্যমে আক্রমণ পাল্টা আক্রমনই পুজোর মূল আকর্ষণ। রাজনৈতিক দলের ছোট খাটো নেতা, মন্ত্রী থেকে মুখ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী সহ বিভিন্ন মন্ত্রী, পুলিশ আধিকারিক বাদ যায়না কেউই। ধারা অব্যাহত এবারও। লোকসভা নির্বাচনের বছর, তাই নতুন উদ্যমে লেগে পড়েছেন পুজো উদ্যোক্তারা। উঠে এসেছে রামমন্দির প্রসঙ্গ। সম্প্রতী রাজ্য রাজনীতির চর্চার কেন্দ্রে থাকা সন্দেসখালির গোলমালের ঘটনা। কোনও মণ্ডপে দেখা যাচ্ছে রাহুল গান্ধীর ভারত জোড় ন্যায় যাত্রা। অ্যারিয়ান্সে মণ্ডপে উদ্যোক্তারা তুলে ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নানা জনমুখি প্রকল্পের কথা।
লক্ষ্মীর ভান্ডার, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী থেকে একশ দিনের কাজ। এনআরসি’র বিরোধীতা থেকে রাজ্যের প্রাপ্য টাকা না দেওয়ার ঘটনা। আবার জাগরণ ক্লাবের মণ্ডপে উদ্যোক্তারা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যাঙ্গচিত্র দিয়ে লিখে ছেন, “আমাকে জেলে পুরলেও, ফুটো করে বেরিয়ে আসবো।” “আমি ১০০টা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল করেছি।” ব্যংচিত্র দিয়ে কোথাও লেখা পিসিকে সরিয়ে ভাইপোর গদি দখলে চেষ্টা ইত্যাদি। পাশেই খেলা হবে ক্লাবের পুজো মণ্ডপে উদ্যোক্তারা নরেন্দ্র মোদী। অমিত শা, যোগী আম্বানীদের ব্যঙ্গচিত্র করে কোথাও ইডি, সিবিআইকে বোতলে করে দুধ খাওয়াচ্ছেন। কোথাও শুভেন্দু অধিকারীর মুখ দুধের বোতল গুঁজে দিচ্ছেন। এভাবে নানা ঘটনা ফুটিয়ে তুলেছে মণ্ডপে মণ্ডপে। বাম সমর্থিত ছাত্র-যুবরা পুজো না করলেও, ব্যাঙ্গচিত্রের মাধ্যমে তৈরি করেছে “বন্দে জেল এক্সপ্রেস ট্রেন”। যে ট্রেনে যাত্রী হিসেবে দেখা যাচ্ছে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের ছবি। উদ্যোক্তা কুন্দন গোপ, সুব্রত চক্রবর্তীরা বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকার সময় থাকে আমরা ট্রেন চালাচ্ছি। এই ট্রেনের মাধ্যমে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের নানা ব্যর্থতা, দুর্নীতির কথা মানূষ্র কাছে তুলে ধরি। মানূষ এগুলো উপভোগ করেন।’ মেদিনীপুর শহরের কলেজ রোডে পঞ্চুরচক থেকে গোলকুয়াচক পর্যন্ত রাস্তার দু-পাশে প্রতি বছর পুজো হয় বেশ কয়েকটি। পুজোর আনদন উপভোগ করতে ঢল নামে কম বয়সী ছেলে মেয়েদের। মেদিনীপুরের যুব সমাজ গোটা বছে অপেক্ষা করেন এই দিনটির জন্য।
সিপিএম নেতা সুশান্ত ঘোষ বলেন, ‘মেদিনীপুরের সরস্বতী পুজোতেই এম ঘটনা হয়। সব মতাদর্শী লোকজন ক্লাবের নাম দিয়ে ব্যঙ্গচিত্রের মাধ্যমে নানা ঘটনা তুলে ধরেন। এটাই মেদিনীপুরের সরস্বতী পুজোর বিশেষত্ব। মানুষ উপভোগ করে বলেই মনে হয়।’ তৃণ্মূলে নেতা, বিধায়ক দীনেন রায় বলেন, ‘বহু বছর ধরে মেদিনীপুরে এই সংস্কৃতি দেখে আসছি। মানুষ উপভোগ করে ঠিকই, তবে সব কিছুতেই একটা শালীনতা থাকা দরকার। কিছু ক্ষেত্রে শালীনতার সীমা ছাড়িয়ে যায় বলে মনে হয়। তবে হ্যাঁ, প্রশাসনের চেষ্টায় মাইক বন্ধ হয়েছে কলেজ রোডের সরস্বতী পুজোতে। এটা একটা ভালোর দিক।’ বিজেপি নেতা অরূপ দাস বলেন, ‘মানুষকে আনন্দ দেওয়ার জন্যই পুজো উদ্যোক্তারা এমন আয়োজন করেন। তাছাড়া এই ব্যঙ্গচিত্রের মাধ্যমে কিছু বার্তাও দেওয়া যায়। যেগুলো মানুষের মনে গেঁথে যায়। এবছর আবার নির্বাচনের বছর, সবার বাড়তি উৎসাহ তো থাকবেই।’