Top Newsবান্ধবীর হয়ে লড়তে গিয়ে যুবকের হাতে খুন বয়ফ্রেন্ড

বান্ধবীর হয়ে লড়তে গিয়ে যুবকের হাতে খুন বয়ফ্রেন্ড

SQUARE BY NEWS: দুই স্কুল ছাত্রীর মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি। আর তা নিয়েই দু’জনের মধ্যে তুমুল অশান্তি। এই পর্যন্ত বড় কোনও সমস্যা হয়নি। কিন্তু সমস্যা বাধল তখনই, যখন দুই ছাত্রীর মধ্যে গোলমাল ও ঝগড়ায় ঢুকে পড়ল তাদেরই দুই বিশেষ বন্ধু। বরং বলা যেতে পারে, দুই স্কুল ছাত্রীই তাদের ‘বয়ফ্রেন্ড’দের ডেকে লড়িয়ে দিল। অনেকটা সিনেমার কায়দায় দুই ছাত্রীর ওই দুই বন্ধু এল তাদের দলবল নিয়ে। বচসার পর শুরু হল মারপিট। আর তারই জেরে এক ছাত্রীর ‘বয়ফ্রেন্ড’-এর মাথায় অন্য এক ছাত্রীর ‘বয়ফ্রেন্ড’ বাঁশ দিয়ে জোরে মারে। আর তাতেই মৃত্যু হয় ওই তরুণের।
এই খুনের ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার লিলুয়ার বামনগাছি এলাকায়। নিজেদের মধ্যে সামান্য গোলমালকে কেন্দ্র করে দুই কিশোরীই লড়িয়ে দেয় তাদের ‘বয়ফ্রেন্ড’দের। তাদের বান্ধবী তথা ‘গার্লফ্রেন্ড’দের তুষ্ট করতে সবে সাবালকত্বে পা দেওয়া দুই তরুণ নিজেদের বন্ধুদের নিয়ে এসে সংঘর্ষ বাধিয়ে ফেলে। আর তাতেই ঘটে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি। যে দুই নাবালিকা কিশোরী ছাত্রীর মধ্যে ঝগড়াকে কেন্দ্র করে ঘটনাটির শুরু, তারা দু’জনই পড়ে হাওড়ার সালকিয়ার একটি স্কুলে। তাদের মধ্যে একজন সালকিয়ার একটি হিন্দি মাধ্যম স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী। অন্যজন একই স্কুলের দশম শ্রেণির। যে তরুণ খুন হয়েছেন, তাঁর নাম সাগর তিওয়ারি (১৯)। গুরুতর আহত অবস্থায় শুক্রবার রাতে তাঁকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সাগরের মৃত্যু হয়। ওই তরুণের পরিবারের তরফে লিলুয়া থানায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে একটি খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়। সাতজনের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করেছে হাওড়া সিটি পুলিশ। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। এই ঘটনার পর থেকে মূল অভিযুক্ত মনু শর্মা ও তার বন্ধুরা পলাতক। রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এই ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। ঠিক কী হয়েছিল? পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুল পড়ুয়া দুই বান্ধবীর মধ্যে কোনও একটি বিষয় নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে অশান্তি চলছিল। ঠিক কী বিষয়, তা জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। সেই অশান্তি মেটাতে এক ছাত্রী তার বয়ফ্রেন্ড ১৯ বছরের তরুণ মনু শর্মাকে হস্তক্ষেপ করতে বলে। মনু তার গার্লফ্রেন্ডের কথা শুনে অপর বান্ধবীকে ফোন করে হুমকি দেয়। মনুর মুখে হুমকি শুনে পাল্টা শোধ তোলার হুমকি দেয় ওই কিশোরীও। সে তার বয়ফ্রেন্ড সাগর তিওয়ারিকে হস্তক্ষেপ করতে বলে। সাগরও তার গার্লফ্রেন্ডের কথা শুনে এই ঝামেলায় হস্তক্ষেপ করে। অন্য পক্ষকে ফোন করে ঝামেলায় জড়ায়।
বিষয়টি মিটমাট করতে শুক্রবার রাতে জগদীশপুর সেন পাড়ার বাসিন্দা সাগরের বান্ধবী সাগরকে ফোন করে তাঁকে ডেকে পাঠায়। পুলিশ জানিয়েছে, সাগর তাঁর জনা চারেক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে সালকিয়ার বামনগাছি ব্রিজের কাছে যান। সেখানে সাগরের বান্ধবী-সহ অপর ছাত্রী ও তার বয়ফ্রেন্ড মনু শর্মাও উপস্থিত ছিল। মনুও তার দশজন বন্ধুকে নিয়ে বামনগাছি ব্রিজে গিয়ে উপস্থিত হয়। সেখানে ওই দুই কিশোরী ফের নিজেদের মধ্যে বচসায় জড়িয়ে পড়ে। বান্ধবীদের বচসা মেটাতে তাদের দুই বয়ফ্রেন্ড বামনগাছি ব্রিজে প্রথমে গোলমাল ও তার পর হাতাহাতি শুরু করেন। মারপিট চলাকালীন মনু একটি বাঁশ দিয়ে সাগরের মাথায় মারে। সাগর রক্তাক্ত অবস্থায় ব্রিজের উপর পড়ে যান। বন্ধুরাই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরের দিন হাসপাতালে সাগরের মৃত্যু হয়। ঘটনার পর থেকেই সালকিয়ার পিলখানার বাসিন্দা মূল অভিযুক্ত মনু শর্মা পলাতক। তাকে ও তার যে বন্ধুরা সেদিন ঘটনাস্থলে ছিল, তাদের খোঁজ করছে পুলিশ। ছেলের মৃত্যুতে শোকবিহ্বল সাগরের মা সরিতা তিওয়ারি রবিবার বললেন, “শুক্রবার রাতে বাজারে গিয়েছিল আমার ছেলে। রাতে খাবার জন্য মাছ কিনে বাড়িতে এসেছিল। হঠাৎই ওর বান্ধবী ওকে ফোন করল। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই কিছু না বলে আমার ছেলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। অনেকক্ষণ বাড়ি আসছে না দেখে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম ছেলে হাসপাতালে ভর্তি। হাওড়া হাসপাতালে গিয়ে দেখি ছেলের মাথায় চোট। তার পর আচমকা ছেলেটা মারা গেল। কী করে এসব হল কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। পুলিশ তদন্ত করুক।” হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিক বললেন, “এই ঘটনায় ৭ থেকে ৮ জন যুবকের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের হয়েছে। তবে কোনও ছাত্রীর বিরুদ্ধে রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনও মামলা দায়ের হয়নি। পুরো ঘটনাই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।” পলাতকদের সন্ধানে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।