কলকাতাকাজ না করলে সরিয়ে দেব,সরকারি কর্মীদের হুঁশিয়ারি মমতার

কাজ না করলে সরিয়ে দেব,সরকারি কর্মীদের হুঁশিয়ারি মমতার

নিজস্ব সংবাদদাতা: জনগণের পরিষেবার কাজে অবহেলা ও গাফিলতির বিরুদ্ধে এবার প্রশাসনিক স্তরে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য থেকে জেলা, আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠকে বুধবার তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন, সাধারণ মানুষের পরিষেবা আটকে যাওয়া আর তিনি বরদাস্ত করবেন না। যিনি কাজ করবেন না তার বিরুদ্ধে ৫৬ জে ধারা মোতাবেক কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাশাপাশি তিনি এও জানিয়ে দেন, দুর্নীতি করলে রাজনৈতিক নেতারা যেমন অভিযুক্ত হন তেমন সরকারি স্তরেও কেউ দুর্নীতি করলে রেহাই নেই। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “কিছু অফিসার এই সব কাজ করছেন বলেই সরকারের বিরুদ্ধে কোথাও কোথাও প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা দেখা যাচ্ছে। এ জিনিস আর আমি সহ্য করব না।” মুখ্যসচিবের উদ্দেশে মমতা বলে দেন, “কেউ অসহযোগিতা করলে সেকশন ৫৬ জে মোতাবেক সোজা বরখাস্ত করে দিন। তারপর আমি দেখে নেব।” এদিনের বৈঠকটি ডাকা হয়েছিল মূলত ‘সমস্যার সমাধান-জনসংযোগ’ কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে। তা নিয়ে আলোচনার মধ্যেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি যে রীতিমতো তথ্য সংগ্রহ করে এসেছেন সেটা সবাই বুঝতে পারে হাতে নোটবুক দেখে। বিভাগ ধরে ধরে ভুল-ত্রুটি গাফিলতি, এমনকী, দুর্নীতির চেষ্টার কথাও তিনি স্পষ্ট বলে দেন।

বিরোধীদের একাংশ সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীকে মিথ্যে অপবাদ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। বৈঠকে এই প্রসঙ্গ তুলে মমতা ক্ষোভপ্রকাশ করেন। প্রশ্ন তোলেন, পঞ্চায়েত বা কোথায় কে চুরি করবে, তার দায় কেন তাঁকে নিতে হবে? বিষয়টি তিনি রাজ্যের এক উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্তাকে দেখে নেওয়ার নির্দেশও দেন। এদিন গয়ংগচ্ছ মনোভাব নিয়ে চলছেন যাঁরা তাঁদের সতর্ক করে তিনি বলেন, “কিছু অফিসার-কর্মী কাজে ফাঁকি দিচ্ছেন। শুক্রবার দুপুর দুটোর সময় বেরিয়ে যাচ্ছেন। সোমবার দুপুর একটার সময় হেলতে দুলতে আসছেন। সব খবর আমি রাখি। মানুষের কাজ চালু রাখতে দরকারে শনি-রবিবারও কাজ করতে হবে। আগে কাজ, পরে ছুটি।” বস্তুত ২০ জানুয়ারি থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি, দুয়ারে সরকারকে একেবারে বুথ স্তরে নিয়ে যাচ্ছে রাজ্য। বুথে বুথে সেই ‘সমস্যার সমাধান-জনসংযোগ’ কর্মসূচির জন্য প্রয়োজনে সর্বস্তরে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটিও বাতিল হতে পারে, ইঙ্গিত দিয়েছেন মমতা।

কেন্দ্রীয় বাজেটের পর বিজেপি ইলেকশনে চলে যেতে পারে বলে ইঙ্গিত রয়েছে। তাই ভোট ঘোষণার আগে সমস্ত কাজ শেষ করতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই প্রেক্ষিতেই বকেয়া কাজ শেষ করতে কঠোর মনোভাব নিলেন। ক’দিন আগেই দলীয় বৈঠকে শৃঙ্খলার বার্তা দিয়েছিলেন। কেউ অন্যায় করলে তাঁর পাশে দল থাকবে না এও বলেছিলেন। এদিন তিনি কঠোর হলেন সরকারি স্তরেও। অর্থাৎ ভোটের ময়দানে তাঁর সরকারের ভাবমূর্তি যাতে অমলিন থাকে তা রক্ষা করতে তৃণমূল নেত্রীর এই তৎপরতা।

এদিনের বৈঠকে ছিলেন মুখ্যসচিব- সহ সমস্ত বিভাগীয় সচিব। ছিলেন ডিএম-এসপি-সহ এমনকী, বিডিও স্তর পর্যন্ত আধিকারিকরা। নবান্ন সূত্রের খবর, তিরিশ মিনিটের বৈঠকে কার্যত অফিসারদের চরম হুঁশিয়ারি দেন মমতা। তিনি যে এ ব্যাপারে খুব ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ তাও মনে করিয়ে দেন। আসলে দুয়ারে সরকারে ঠিকঠাক পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠছে। তাই নিয়ে বৈঠকে ক্ষোভপ্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী।