খড়গপুর: চিকিৎসার গাফিলতিতে এক যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্মরত এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। ঘটনায় সরব হয়েছেন খড়গপুর পুরসভার ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা পুরসভার বিজেপির পরিষদীয় দলনেতা অনুশ্রী বেহেরা। সেই চিকিৎসকের শাস্তির দাবিতে শুক্রবার মৃত যুবকের পরিজন ও প্রতিবেশীরা হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। তাঁরা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্মরত ওই চিকিৎসকের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। জানা গিয়েছে মৃত যুবকের নাম তপন সাহু(৪২)। বাড়ি খড়গপুর পুরসভার ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের নিউ ডেভেলপমেন্ট এলাকায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পেছনে। এলাকায় অত্যন্ত পরোপকারী বলে এই যুবকের পরিচিত ছিল। জানা গিয়েছে পেশায় দিনমজুর এই যুবক বাড়িতে ছাগল পুষতেন। সেই ছাগলকে কাঁঠাল গাছের পাতা খাওয়ানোর জন্য পাশেই একটি দোতলা কোয়ার্টারের ছাদ থেকে কার্ণিশে নেমে ডাল কাটছিলেন বৃহস্পতিবার সকালে। যদিও আশেপাশের অনেকেই নিষেধ করেছিলেন বৃষ্টির মধ্যে ওইভাবে কার্ণিশে দাঁড়িয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাছের ডাল কাটতে। কিন্তু তিনি সেই নিষেধে কান দেন নি। দুটি ডাল কাটার পর তৃতীয় ডালটি কাটতে গিয়ে তিনি কার্ণিশ থেকে সোজা ৩০ ফুট নিচে মাটিতে আছড়ে পড়েন। ঘটনা দেখার পরেই দ্রুত তাঁকে সকলে মিলে খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেই সময় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসকের পরামর্শে তাঁর এক্স রে করা হয়। তারসাথে দুটি ইনজেকশন দেওয়া হয়। তারপর কয়েকটি ওষুধ দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এদিকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর দুপুরে অল্প ভাত খান যুবক। তারপর ওষুধ খেয়ে শুয়ে পড়েন। বিকাল সাড়ে চারটা নাগাদ তিনি অসুস্থ বোধ করতে শুরু করেন। একবার বমিও করেন। তারপরেই তাঁর আত্মীয় পরিজনরা ফের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু করেন। তারমধ্যেই তিনি বাড়িতে নিস্তেজ হয়ে পড়েন। তারপর তাঁকে বৃষ্টির মধ্যে দ্রুত ফের খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্মরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এই ঘটনার পর মৃতের পরিজন ও প্রতিবেশীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁরা অভিযোগ তোলেন চিকিৎসার গাফিলতিতে যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তারজন্য বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক দায়ী। এই ব্যাপারে সন্ধ্যা বিশ্বাস নামে মৃত যুবকের এক মাসি বললেন ” আমরা ভাবতে পারছি না কিভাবে চিকিৎসক জখম রোগীকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিলেন। ওনার উচিত ছিল ভর্তি করে নেওয়া। তারসাথে ভেতরে কোনও চোট ছিল কিনা সেটি খতিয়ে দেখা। কিন্তু তিনি সেসব না করে এক্স রে করিয়ে দুটো ইনজেকশন দিয়ে ও কয়েকটি ওষুধ লিখে দিয়ে সোজা বাড়িতে পাঠিয়ে দিলেন। আমরা এর বিচার চাইছি।” অপরদিকে মৃতের দাদা স্বপন সাহু বললেন ” আমরা অতশত বুঝি না। দোষী চিকিৎসকের শাস্তি চাইছি।” ঘটনার জেরে এলাকায় একদিকে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অপরদিকে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এই ব্যাপারে স্থানীয় কাউন্সিলর অনুশ্রী বেহেরা বললেন ” চিকিৎসার গাফিলতিতে যুবকের মৃত্যু হয়েছে। ওইরকম জখম অবস্থায় যুবককে ছেড়ে দেওয়া ঠিক হয় নি। আমরা পরিবারের পাশে রয়েছি। আমরা চাই না এইভাবে চিকিৎসার গাফিলতিতে আর কোনও মৃত্যু হোক।” শুক্রবার মৃত যুবকের মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। এদিকে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার গৌতম মাইতি বললেন ” মৃতের পরিবারকে লিখিত অভিযোগ করতে বলা হয়েছে। এছাড়া আমরা মৃতের পরিবারকে ও চিকিৎসককে নিয়ে আলোচনায় বসব।” মৃত যুবকের মাসি জানালেন বোনপোর মৃতদেহের ময়নাতদন্ত ও শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার পর একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেবেন সুপারের কাছে।