Top NewsSabang: এলাকার মানুষের ভরসা তিনিই, ৮৫ বছর বয়সে আজও চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে...

Sabang: এলাকার মানুষের ভরসা তিনিই, ৮৫ বছর বয়সে আজও চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে আসছেন দশগ্রামের এই ডাক্তার বাবু

ইন্দ্রজিৎ সাহু: ডাক্তাররা আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাস্তব জীবনেও দেখা যায় রোগীর জীবন বাঁচাতে পারলে তবেই তারা ডাক্তার, আর না পারলে তারা হয় খুনী। তবুও তারা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে অন্যের জীবন সুস্থ রাখার লড়াই করে যান প্রতিনিয়ত।

বর্তমান সময়ে বহু মানুষ রয়েছে যারা প্রতিদিন সংসারে খরচ যোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন, তার উপর যদি বাঁধে রোগের বাসা,তো আর কথাই নেই। গ্রামাঞ্চলে এমন বহু পরিবার রয়েছে যাদের একদিকে সংসারের খরচ অন্যদিকে চিকিৎসা খরচ জোগাড় করা এক প্রকার দায় হয়ে পড়ে। যদিও বিনামূল্যে সরকারিভাবে বিভিন্নভাবে চিকিৎসা পরিষেবা মানুষের জন্য চালু রয়েছে, এতে মানুষ ভীষণভাবে উপকৃত হচ্ছে, তবে প্রাথমিকভাবে সাধারণ জ্বর জালার চিকিৎসা করাতে সামান্য টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খায় বহু পরিবার। কিন্তু সাধারণ মানুষের জন্য অনেক সময় দক্ষ চিকিৎসকের প্রয়োজন হয়। কিন্তু শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে সরকারি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত দক্ষ চিকিৎসকের সংখ্যা কম রয়েছে।

সেরকম একটি উদাহরণ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবং থানার অন্তর্গত ৪ নম্বর অঞ্চলের দশগ্রাম এলাকা। যেখানে সরকারি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত (এমবিবিএস) ডাক্তারের সংখ্যা নেই বললেই চলে। যদিও বা আছে তারা কেউ গ্রামে না থেকে বাইরে মানুষের জন্য চিকিৎসা করছেন। কিন্তু গ্রামের সাধারন মানুষেরও তো আশা থাকে এমবিবিএস ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করানোর। আজও সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে স্বল্প খরচে শারীরিক অসুস্থতার মধ্য দিয়ে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন এই ৮৫ বছরের প্রবীণ চিকিৎসক সুজয় রঞ্জন দাস।

রোগীদের চিকিৎসা করছেন ডাক্তার সুজয় রঞ্জন দাস বাবু

বাড়ি দশগ্রাম সতীশচন্দ্র বুথ এলাকায়। তিনি পেশায় একজন (MBBS) চিকিৎসক। জানা যায়,ডাক্তারবাবু ৫৭ বছর ধরে সাধারণ মানুষের জন্য বাড়িতে চিকিৎসা করে চলেছেন। মাঝেমধ্যেই এমন মানুষজন আসেন যাদের চিকিৎসা অতি প্রয়োজন তবে তাদের ডাক্তারবাবুকে দেওয়ার মত বা ওষুধ কেনার মত টাকা নেই। তাদের স্বল্প খরচের বিনিময়ে চিকিৎসা পরিষেবা দেন।

এদিকে ছোটবেলা থেকে বেড়ে ওঠার গল্প শুনালেন সুজয় রঞ্জন দাস বাবু। তিনি বলেন আমাদের পরিবারের মোট সদস্য ছিল পাঁচ জন। তৎকালীন সময়ে আমরা জমিদার পরিবার হলেও খুব অবহেলিত ছিলাম। আমাদের বাড়িতে কেউ ভয়ে খেতে আসতো না। তবে দোষ কিন্তু গ্রামবাসীদের ছিল না। মূল কারণ ছিল পরিবারের সবাই টিবি রোগে আক্রান্ত ছিলেন। সেই ভয়ে কেউ আসতো না বাড়িতে। আমার জন্মের পর মায়ের মৃত্যু হয়। তারপর থেকে নিঃসন্তান জেঠিমা আলোচনা দাস তিন ভাইকে মানুষ করেন। প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার পর বাবার মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে জেঠুও টিবি রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তারপর থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর ইচ্ছা জাগলো। ১৯৫৭ সালে দশগ্রাম সতীশ চন্দ্র সর্বার্থসাধক শিক্ষাসদন হাইস্কুলে মাধ্যমিক পাস করার পর, বিদ্যাসাগর ইউনিভার্সিটিতে মেডিকেল বিভাগে ভর্তি হন।

তারপর সেখান থেকে স্নাতক হন ১৯৫৯ সালে। পরে কলকাতা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, নীলরতন মেডিকেল কলেজ,আরজিকর মেডিকেল কলেজ ইন্টারভিউ দেওয়ার পর। ১৯৬৫ সালে এমবিবিএস পাশ করেন। তৎকালীন সময়েও ইন্ডিয়ান আর্মিতে চাকরির সুযোগ এলেও তিনি হাতছাড়া করেন। তিনি আরো জানান আমার মূল উদ্দেশ্য ছিল পরিবারের সদস্যরা যেভাবে টিবি রোগে আক্রান্তে মৃত্যু হয়েছিল। সেরকম পরিস্থিতিতে যেন গ্রামের সাধারণ মানুষকে পড়তে না হয়। সেই চিন্তাধারা মাথায় রেখে নিজের চেষ্টায় গ্রামেই ডাক্তারি শুরু করি। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের জন্য চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০ জন করে রোগী আসেন এবং স্বল্প খরচের বিনিময়ে চিকিৎসা পান। শুধু এই এলাকা নয় নারায়ণগড় ব্লক-পূর্ব মেদিনীপুর জেলার একাধিক মানুষ আসেন চিকিৎসা পরিষেবা নেওয়ার জন্য। আগামী দিনের আরও কিভাবে মানুষের পাশে থাকা যায় সেদিকে গুরুত্ব রাখবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

অন্যদিকে তৎকালীন সময়ে গ্রামে রোগীর চিকিৎসা করে গিয়ে ঘটে যাওয়া রোমহর্ষক কাহিনী শোনালেন। তখন সালটা ১৯৭০ নারায়ণগড় ব্লকের অন্তর্গত দুড়িয়া মৌজার কিংবা পাশাপশি এলাকার মধ্যে বড় জমিদার ছিলেন রাজেন জানা।

বাড়িতে হঠাৎ রাজেন জানা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখনই ডাক্তার খোঁজার তোড়জোড় চলছে। খবর এসে পৌঁছায় সুজয় বাবুর কাছে। খবর পাওয়ার পর জমিদার রাজেন জানার বাড়িতে চিকিৎসার সরঞ্জাম নিয়ে পৌঁছে যান সুজয় বাবু। চিকিৎসা শেষ করে বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সেই সময় হঠাৎই ডাকাতদের দল ডাক্তার সুজয় বাবুর বুকে বন্দুক ঠেকিয়ে রেখে বলতে শুরু করে পাঁচ কেজি সোনা কোথায় রেখেছিস বল। প্রথমে কিছুটা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন সুজয় বাবু। পরবর্তীতে তিনি ডাকাতের দলকে বলেন,আমি রাজেন জানা নয়।  আমি রাজেন জানা বাবুর চিকিৎসা করানোর জন্য এসেছি। তারপর ডাকাতের দল রাজেন জানাকে খোঁজাখুঁজি শুরু করার সাথে সাথে বাড়ি লুটপাট চালায়। পরবর্তীতে রাজেন জানাকে খুঁজে পাওয়ার পর বেধড়ক মারধর করে তারা। মানুষের চিকিৎসা করতে গিয়ে একসময় এইরকম ভয়ংকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে এই প্রবীণ ডাক্তারবাবুকে।