Top News‘লিঙ্গ সংবেদনশীলতা’ নিয়ে কোর্স চালু করতে চলেছে IIT-খড়গপুর

‘লিঙ্গ সংবেদনশীলতা’ নিয়ে কোর্স চালু করতে চলেছে IIT-খড়গপুর

নিজস্ব সংবাদদাতা, খড়্গপুর: তাগিদ ছিল কর্মক্ষেত্রে অগ্রগণ্য হয়ে ওঠার। যদিও সমাজ মুখোমুখি হয়েছে এক কঠিন বাস্তবের। কর্মস্থলেই এক মহিলা চিকিৎসককে নৃশংসভাবে ধর্ষণ ও খুনের শিকার হতে হয়েছে। আর জি করের সেই ঘটনা নাড়া দিয়েছে শত-কোটির বিবেক। বদলে গিয়েছে তাগিদের অভিমুখ। শুধু কর্মস্থল নয়, সময় এসেছে শিক্ষাক্ষেত্রেও মানসিকতার বদল আনার। প্রয়োজনীয়তা বুঝে এমন আবহে ‘লিঙ্গ সংবেদনশীলতা’ নিয়ে কোর্স চালু করতে চলেছে আইআইটি!

খড়্গপুর আইআইটি নতুন ভর্তি হওয়া পড়ুয়াদের জন্য বাধ্যতামূলক এই কোর্স চালু করতে চলেছে। ‘লিঙ্গ সংবেদনশীলতা ও লিঙ্গ বিচার’ শীর্ষক এই কোর্স চলতি বছরে ভর্তি হওয়া সমস্ত পড়ুয়ার জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আর জি করের ঘটনায় যখন গোটা দেশ উত্তাল তখন আইআইটির মতো প্রযুক্তিবিদ্যার বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠানে এই কোর্স অন্যমাত্রা যোগ করেছে। পড়ুয়াদের মধ্যে লিঙ্গ সংবেদশনশীলতার পাশাপাশি যৌন হয়রানি ও বৈষম্য বিরোধী সচেতনতা গড়ে তুলতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই সচেতনতা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গণ্ডি ছাড়িয়ে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে ও কর্মস্থলে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ন বলে মনে করছেন আইআইটির অধ্যাপকরা।

আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই নথিভুক্ত হওয়া পড়ুয়াদের কোর্সের কিট তুলে দেওয়া হবে। চলতি সেমিস্টারেই এই কোর্স শেষ করতে হবে বলে জানা গিয়েছে। যাঁর প্রস্তাবে এই কোর্স চালু করছে আইআইটি কর্তৃপক্ষ তিনি রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক তথা ‘উইমেন স্টুডেন্টস কাউন্সিল’-এর সভাপতি অমিতা পাঠক মোহান্তি। তিনি বলেন, “আমরা যৌন হয়রানি প্রতিরোধ আইনের উপর নির্ভর করে এই বাধ্যতামূলক কোর্স তৈরি করেছি। কারণ শুধু আমাদের আইআইটি নয়, এই বিষয়ে পড়ুয়ারা সচেতন হলে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্র ও কর্মস্থলে তাঁরা সুফল পাবে।

এক্ষেত্রে লিঙ্গ ও যৌনতার মধ্যে যে পার্থক্য সে বিষয়ে সচেতন করা হবে পড়ুয়াদের। নারী-পুরুষের মধ্যে শারীরিক গঠন ও জৈবিক পার্থক্য ছাড়া সকলে সমান এটা বোঝাতে হবে। এর পরে বুঝতে হবে যে অনুমতি ছাড়া যৌনতা আইনসিদ্ধ নয়। এমনকি একবার অনুমতি মানে তা সর্বকালীন ছাড়পত্রও নয়। এই বিষয়গুলিতে আমরা গুরুত্ব দিয়েছি।”

অবশ্য এই কোর্সের ভাবনা এসেছে আর জি করের ঘটনার অনেক আগেই। ২০২১সালে বোম্বে আইআইটি এমন ধরনের কোর্স তাঁদের পড়ুয়াদের জন্য চালু করেছিল। তাতে কর্পোরেটে চাকরির ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য হচ্ছে তাঁরা। পড়ুয়াদের মাধ্যমে সে কথা জেনে চলতি বছরের গোড়ায় বিষয়টি আইআইটির সেনেটে প্রস্তাব আকারে তুলে ধরেছিলেন উইমেন স্টুডেন্টস কাউন্সিলের সভাপতি অধ্যাপক অমিতা পাঠক মোহান্তি। তার পরে সেনেটে সেই প্রস্তাব গৃহীত হয়। তবে কোর্স চালুর আগেই ঘটে যায় আর জি করের সেই নারকীয় ঘটনা। তার পরে আইআইটির পক্ষ থেকে প্রত্যক পড়ুয়ার জন্য বাধ্যতামূলকভাবে এই কোর্স চালুর বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ন। যদিও আইআইটির কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের এক অধ্যাপকের কথায়, “সত্যি বলতে আমাদের পড়ুয়ারা একটু আত্মকেন্দ্রিক। পড়াশোনা শেষে নিজেদের কর্মক্ষেত্রে অগ্রাধিকারের সুযোগ পেতেই ওঁরা এমন কোর্স চেয়েছিল। তবে যে সময় এই কোর্স চালু হচ্ছে সেই সময়ে বাস্তবের মাটিতে আর জি করের মতো ঘটনা আমাদের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। এই শিক্ষা এখন বড় প্রাসঙ্গিক।” এমনকি এ বার আর জি কর কাণ্ডে ‘রাত দখল করো’ কর্মসূচির দিনে মোমবাতি নিয়ে প্রতিষ্ঠান চত্বরে মিছিলও করেছিল আইআইটির পড়ুয়ারা।

স্বাভাবিকভাবে আইআইটির পড়ুয়াদের মানসিকতায় এমন নৃশংস ঘটনা নাড়া দিয়েছে বলেও মনে করা হচ্ছে। মেক্যানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম বর্ষের এক ছাত্র বলেন, “আমাদের তো এই লিঙ্গ সংবেদনশীলতার কোর্স বাধ্যতামূলকভাবে নিতে হবে বলে জানানো হয়েছে। তবে আর জি করের মতো ঘটনার পরে আমাদেরও মনে হচ্ছে এই শিক্ষা সত্যিই প্রয়োজনীয়।”

ইতিমধ্যেই কোর্সের সামগ্রিক বিষয়বস্তু একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাকে দিয়ে ভিডিয়ো শিক্ষা ব্যবস্থার আদলে সাজানো হয়েছে। অনলাইন মাধ্যমে মাত্র ১ঘন্টায় শেষ করা যাবে এই কোর্স। সবমিলিয়ে এই কোর্সে রয়েছে ২০টি পর্যায়। প্রতিটি পর্যায় শেষে রয়েছে প্রশ্ন-উত্তর পর্ব। যদিও এই কোর্স বাধ্যতামূলক করা হলেও পড়ুয়াদের কোনও মূল্যায়ন করা হবে না বলে আইআইটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে পড়ুয়াদের মার্কশিটে উল্লেখ থাকবে এই কোর্স। ভর্তি হওয়া সমস্ত স্নাতক, স্নাতকোত্তরের সব পড়ুয়াদের এই কোর্স বাধ্যতামূলক। তাতে প্রায় ৫হাজার পড়ুয়াকে এক লপ্তে এই কোর্স প্রদান করা হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যাপক অমিতা পাঠক মোহান্তির কথায়, “যখন সেনেটে কোর্সের প্রস্তাব দিয়েছিলাম তখন তো আর জি করের ঘটনা ঘটেনি। তখন পড়ুয়াদের দাবি মেনেই প্রস্তাবটা দিয়েছিলাম। এখন এসে মনে হচ্ছে আমাদের এই কোর্সে যদি পড়ুয়ারা সামান্য সচেতনও হতে পারে, সেটাই হবে আমাদের সার্থকতা।”