Top Newsবিখ্যাত শিল্পী কিশোর কুমারের মৃত্যুবার্ষিকীতে জানুন তাঁর সম্পর্কে কিছু অজানা কথা

বিখ্যাত শিল্পী কিশোর কুমারের মৃত্যুবার্ষিকীতে জানুন তাঁর সম্পর্কে কিছু অজানা কথা

SBN DIGITAL: ভারতীয় সিনেমা জগতের একজন বিশিষ্ট গীতিকার, গায়ক, সঙ্গীত পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, অভিনেতা, পরিচালক এবং চলচ্চিত্র প্রযোজক হলেন কিশোর কুমার। সঙ্গীত জগতের অন্যতম স্বীকৃত এই কণ্ঠশিল্পী, নিজের ব্যক্তিগত জীবনে মানসিক অস্থিরতা থাকার কারণে বহু সংগ্রাম করেছিলেন। তবে তিনি নিজের প্রতিভার মাধ্যমে দর্শকদের মনে আলাদাভাবে জায়গা করে নিয়েছিলেন।

কিশোর কুমার জীবদ্দশায় হিন্দি চলচ্চিত্র জগতের একজন সফল প্লেব্যাক গায়ক ছিলেন, তবে হিন্দি ছবির পাশাপাশি তিনি বাংলা, মারাঠি, গুজরাটি, ভোজপুরি, কন্নড়, আসাম, মালায়লাম, ওড়িয়া এবং উর্দু সহ আরো ভিন্ন কিছু ভাষায় গান গেয়েছিলেন। গানের জন্য পুরস্কারও পেয়েছেন অনেক। আজ এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা এই বিশিষ্ট শিল্পীর জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরার চেষ্টা করবো। ১৯২৯ সালের ৪ ঠা আগস্ট কিশোর কুমারের জন্ম হয়। ১৯৮৭ সালে ১৩ অক্টোবর মারা যান কিশোর কুমার। তিনি মধ্যপ্রদেশের খান্ডোয়া নামক একটি ছোট শহরে জন্ম গ্রহণ করেন।

তিনি এক বাঙালি পরিবারের সদস্য ছিলেন। জন্মের পর তাঁর নাম রাখা হয়েছিল আভাস কুমার গাঙ্গুলী। কিশোর কুমারের বাবার নাম ছিল কেলাল গঙ্গোপাধ্যায়, যিনি পেশাগতভাবে ছিলেন একজন আইনজীবী এবং মায়ের নাম গৌরী দেবী। কিশোর কুমারের দুই জন ভাই এবং একটি বোন ছিল।  ভাইদের নাম হল অশোক কুমার এবং অনুপ কুমার; অন্যদিকে বোনের নাম সতী দেবী। চারজন ভাই বোনের মধ্যে কিশোরই ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। বড় ভাই অশোক কুমার বেশ কিছু হিন্দি ছবিতে কাজ করেছিলেন। অশোক কুমারের সহায়তায় ওপর ভ্রাতা অনুপ কুমারও কিছু বলিউড চলচ্চিত্রে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। নিজের ভাইদের সঙ্গে সময় কাটানোর মধ্য দিয়ে কিশোর কুমারও চলচ্চিত্র এবং সঙ্গীতের দিকে আগ্রহী হয়ে পড়েছিলেন।

বিখ্যাত শিল্পী কিশোর কুমার প্রাথমিক শিক্ষা শেষে ইন্দোরে অবস্থিত ক্রিশ্চিয়ান কলেজে পড়াশুনা করেছিলেন এবং সেখান থেকেই তিনি স্নাতক অর্জন করেন। কোনোও ধরনের প্রথাগত প্রশিক্ষণ না নিয়েই চলচ্চিত্র দুনিয়ায় প্রবেশ করেছিলেন কিশোর কুমার। চলচ্চিত্র জগতে জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা অশোক কুমারের প্রভাবই ছিল এর মূল কারণ। দুই ভাইয়ের বয়সের মধ্যে ১৮ বছরের তফাৎ ছিল, যার মাধ্যমে কিশোর বেশ উপকৃত হয়েছিলেন। অনেক কম বয়সেই তিনি চলচ্চিত্রে নিজের জায়গা করতে পেরেছিলেন এবং অন্যদিকে বোম্বে টকিজের কোরাস গায়কও হয়ে উঠেছিলেন কিশোর কুমার। এক কথায় এই সুখ্যাত শিল্পীর ক্যারিয়ার শুরুর দিকে বড় ভাইয়ের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।

স্বনামধন্য এই গায়কের বিবাহিত জীবন তেমন সুখের ছিল না। তিনি মোট চারবার বিবাহ করেছিলেন। কিশোর কুমার প্রথমে ১৯৫০ সালে রুমা গুহাঠাকুরতাকে বিয়ে করেন। রুমা ছিলেন সত‍্যজিৎ রায়ের ভাইজি, একজন অভিনেত্রী, গায়িকা তথা সমাজকর্মী। এই ঘরে এক সন্তানের জন্ম হয়, যার নাম অমিত কুমার। ছেলের জন্মের পর কিশোর কুমার চেয়েছিলেন রুমা যেন কাজ ছেড়ে দিয়ে ছেলেকে নিয়ে বাড়িতেই থাকে। কিন্তু স্ত্রী এই সিদ্ধান্তটিকে মেনে নেন নি বলে তাদের বিয়ে আর বেশিদিন টেকেনি। মাত্র ৮ বছরের বৈবাহিক সম্পর্ক ছিল তাদের মধ্যে। ১৯৬০ সালে কিশোর কুমার মধুবালাকে বিয়ে করেন। কিন্তু সেই বিয়েও বেশিদিন টেকেনি। মাত্র ৯ বছরেই সীমাবদ্ধ ছিল তাদের দাম্পত্য জীবন। বিয়ের একমাস পরেই মধুবালা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর হৃৎপিন্ডে জন্মগত ছিদ্র থাকার কারণে তিনি বেশিদিন জীবিত থাকবেন না বলে জানিয়ে দেন চিকিৎসকরা। মাত্র ৩৬ বছর বয়সে মধুবালার মৃত্যু হয়।


বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় যে, মধুবালাকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে কিশোর কুমার ঈসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং নিজের নাম বদলে দিয়ে করিম আবদুল নাম গ্রহণ করেছিলেন। মধুবালার মৃত‍্যু হওয়ার পর ১৯৬০ সালে যোগীতা বালিকে বিয়ে করেন কিশোর কুমার। এই বিবাহ মাত্র তিন বছর স্থায়ী হয়, কারণ যোগিতা ছিলেন অভিনেত্রী এবং বিয়ের দু’ বছর পরই ‘খোয়াব ‘ চলচ্চিত্রের সময় মিঠুন-যোগীতার আলাপ হয়। এরপর থেকেই কিশোর কুমারের থেকে দূরে সরে যান যোগীতা।

এরপর লীনা চন্দাভারকারের সাথে কিশোর কুমারের আলাপ হয়। লীনা প্রথমে এই বিয়ে করতে চাননি, কারণ কিশোর ছিলেন লীনার থেকে ২১ বছরের বড়, তাছাড়া কিশোরের আগেও তিনবার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। কিন্তু পরিবারের সকলের সম্মতি থাকায় ১৯৮০ সালে তাদের বিয়ে হয়, পরবর্তীতে তাদের এক সন্তানের জন্ম হয়, যার নাম রাখা হয় সুমিত কুমার।

কিশোর কুমারের কিছু জনপ্ৰিয় বাংলা গান:
1: এইতো জীবন
2: নীল নীল আকাশে
3: একদিন পাখি উড়ে
4:আশা ছিল ভালোবাসা ছিল
5:আজ এই দিনটাকে
6:চিরদিনই তুমি যে আমার
7:তোমরা যতই আঘাত কর
8:সে যেন আমার পাশে
9:জানি যেখানেই থাকো
10: আমার পূজার ফুল
11:কি আশায় বাঁধি খেলাঘর
12:আধো আলো ছায়াতে
13:প্রেম বড়ো মধুর

কিশোর কুমারের জনপ্ৰিয় কিছু হিন্দি গান :
1:রূপ তেরা মাস্তানা
2:আগার তুম না হোতে
3:জিন্দেগী এক সফর
4:মেরে দিল মে আজ
5:ও মাঝি রে
6:ওম শান্তি ওম
7:ও সাথী রে
8:দে দে প্যায়ার দে
9:মেরা জীবন কোরা কাগজ
10:চিঙ্গারি কোয়ি ভড়কে
11:খাইকে পান বানারাস ওয়ালা

কিশোর কুমার এর পুরস্কার প্রাপ্তি: কিশোর কুমার একজন সেরা প্লেব্যাক গায়ক হিসাবে 8 টি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জয় করেছিলেন এবং তাঁর সময়ে তিনি সবচেয়ে বেশি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জয়ের রেকর্ডও তৈরি করেছিলেন। এটি ছিল তাঁর জীবনের অন্যতম অর্জন। তাছাড়াও কিশোর কুমার মধ্যপ্রদেশ সরকার থেকে ১৯৮৫-৮৬ সালে লতা মঙ্গেশকর পুরস্কার দ্বারা ভূষিত হয়েছিলেন। ১৯৯৭ সালে মধ্যপ্রদেশ সরকার ‘কিশোর কুমার পুরস্কার’ নামক একটি পুরস্কার চালু করেছিল।

ফিল্মফেয়ার পুরস্কার:-
1:১৯৭০ –  “রূপ তেরা মস্তানা”
2:১৯৭৬ –  “দিল এইসা কিসিনে মেরা ”
3:১৯৭৯ – “খাইকে পান বানারাস ওয়ালা”
4:১৯৮১ – “হাজার রাহে মুরকে দেখে”
5:১৯৮৩ – “পাগ ঘুঙ্গরু বন্ধ” –
6:১৯৮৪ – “আগর তুম না হতে “
7: ১৯৮৫ –  “মঞ্জিলে আপনি জাগাহ হে”
8: ১৯৮৬ – “সাগর কিনারে “