এসবিএন নিউজ ডিজিটাল: বিপর্যয়ে থেমে থাকে না শিল্প। বরং শিল্পী-মনে জেগে ওঠে বাড়তি দায়বদ্ধতা। মেদিনীপুরের মাটির পটশিল্পও তার ব্যতিক্রম নয়। দিন যত এগোচ্ছে, আন্দোলনের ঝাঁঝ ততই বাড়ছে। সবার একটাই সুর দোষীদের শাস্তি চাই। নক্কার জনক ঘটনার বিচার চেয়ে আন্দোলনের ঢেউ আছরে পড়েছে দেশ থেকে বিদেশে। এবার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শিক্ষার্থী চিকিৎসক’কে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার প্রতিবাদে গান বাঁধলেন পটুয়ারা। শুরু করেছেন ছবি আঁকাও।
পটচিত্র শিল্পীদের পক্ষ থেকেও সমাজে বার্তা দিতে চান তাঁরা। চিকিৎসক হোক, নার্স হোক বা সাধারণ মেয়ে, তাঁরা আমাদেরই ঘরের মেয়ে। তাঁদের নিরাপত্তা চাই। গান ও পটচিত্রের মাধ্যমে আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে চান পিংলার পটচিত্র শিল্পীরা। ইতিমধ্যেই পিংলার পটুয়ারা প্রতিবাদের পটচিত্র আকার কাজ শুরু করেছেন। গান রেডি। দু-এক দিনের মধ্যেই প্রতিবাদের ভাবনা ফুটে উঠবে তাঁদের পটচিত্রের মাধ্যমে।
বন্যা, কলেরা, ডাইরিয়া থেকে করোনা মহামারি, পেন্টাগন হামলা থেকে নির্ভয়া কান্ড কোনও কিছুতেই তাঁরা থেমে থাকেন নি পটুয়ারা। গান ও ছবির মাধ্যমে তাঁরা সমাজে সচেতন বার্তা দিয়েছেন, প্রতিবাদের ভাষা ব্যক্ত করেছেন। এবারও তাঁরা আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে গান বেধেছেন। প্রতিবাদের ছবিও আঁকছেন। আরজি করে ধর্ষণকাণ্ডের প্রতিবাদে পটুয়াদের গান- ‘আরজি করে ধর্ষণ হলেন ডাক্তার দিদিমণি। ধর্ষণ করে হত্যা করলো শয়তান মুখোশধারী। আরজি করে ধর্ষণ হলেন…। ডাক্তার হলেন আমাদের দ্বিতীয় ভগবান, ডাক্তার আমাদের বাঁচান যে প্রাণ। পৃথিবী জুড়ে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ আওয়াজ উঠিলো, দোষীদের শাস্তির দাবিতে সবাই রাস্তায় নামিলো…।’ ঘটনার প্রতিবাদে, দোষীদের শাস্তির দাবিতে এমনই এক গান বাধলেন পিংলার পটুয়ারা। পটচিত্র শিল্প বাহাদুর চিত্রকরের নেতৃত্বে দিনরাত রিহারশাল করছেন বাহারজান চিত্রকর, রূপসোনা চিত্রকর, সাবিনা চিত্রকররা। কেউ দলবদ্ধ ভাবে, আবার কেউ একক ভাবে আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে গান ও পটচিত্র আঁকছেন। এটাই তাদের প্রতিবাদের ভাষা।
পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার নয়া’র স্বনামধন্য পটচিত্র শিল্পী বাহাদুর চিত্রকর বলেন, “শিল্পীরা প্রতিবাদ না করলে সমাজ তাঁদের ক্ষমা করবে না। এমন একটা ঘটনায় আমরা বসে থাকতে পারিনা। সমাজের অন্যান্য পেশার মানুষের সঙ্গে আমরাও চাই, যারা এধরণের ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি হোক। পটচিত্র শিল্পী বাহাদুর চিত্রকর বলেন, বন্যা, খরা, প্রাকৃতিক বিপর্জয়, মহামারি থেকে সমাজে ঘটে যাওয়া কোনও অন্যায়, প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমরা পটুয়ারা আমাদের শিল্পকর্মের মাধ্যমে সমাজকে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হবে না। আমরাও চায় আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে শিক্ষার্থী মহিলা চিকিৎসক’কে যারা ধর্ষণ ও খুন করেছে আমাদের গান ও পটচিত্রের মাধ্যমে আমরা তাদের শাস্তি চাইছি। গোটা বিশ্বের মানুষের সঙ্গে আমরাও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
পিংলার নয়া’র বিখ্যাত পটচিত্র শিল্পী স্বর্ণ চিত্রকর বলেন, “প্রতিবাদ তোআমাদের করতেই হবে। দিল্লির নির্ভয়ার ঘটনার পরেও আমরা প্রতিবাদের গান বেধেছিলাম, ‘শুনুন বাবুমশাইরা, একটু ভাবুন আপনারা। এই অপমান সইতে পারছি না। মেয়েটি ছিল বন্ধুর সাথে। তাঁকে বাসে বেঁধে রেখে গাড়ির ভেতরে এই ঘটনা আমরা আগে কোনও দিন শুনি না, শুনুন বাবুমশাইরা…।’ প্রতিবাদের ছবিও এঁকেছিলাম। এবারও থেমে নেই। গান লিখছি, ছবিও আঁকবো। পটের গান ও ছবির মাধ্যমে আমরা এই ঘটনার প্রতিবাদ জানাবো।”
সময় যত এগোচ্ছে, প্রতিবাদের ঝাঁজও ততই বাড়ছে। প্রতিবাদের ঢেউ আছড়ে পড়েছে রাজ্য ছাড়িয়ে দেশ থেকে বিদেশে। সমাজের সর্বস্তরের মানুষ রাস্তায় নেমেছেন প্রতিবাদ জানাতে। থেমে নেই শিল্পীরাও। কোথাও শিল্পীরা রঙ-তুলির মাধ্যমে সাদা ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলছেন তাঁদের প্রতিবাদের ভাষা। আবার কোথাও শিল্পীরা গান বেধে, ছবি এঁকে আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
রুপসোনা চিত্রকর। পিংলার ন’য়া গ্রামের পটশিল্পী।
পিংলার পটচিত্র শিল্পী রূপসোনা চিত্রকর বলেন, “আমরাও মহিলা। হাসপাতালের মধ্যে চিকিৎসকরা নিরাপদ নয়। আমরা সাধারণ মানুষ নিরাপদে থাকবো কী করে! এই ঘটনার প্রতিবাদ তো সকলেরই করা উচিৎ। দোষীরা কঠোর শাস্তি না পেলে সমাজে এঘটনা বন্ধ হবে না।” নয়া’র প্রবীণ পটচিত্র শিল্পী শ্যামসুন্দর চিত্রকর বলেন, “যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তারা মানুষ নয়। পশুর চেয়েও অধম। এই ঘটনা নিন্দনীয়। ধিক্কার জানাবার ভাসা নেই। আমিওচাই দোষীরা কঠোর শাস্তি পাক। কিন্তু আমি এই অধমদের পটচিত্রে স্থান দিতে চায় না।”