নিজস্ব সংবাদদাতাঃ বড়সড় করে আনুষ্ঠানিক বিয়েরও আয়োজন হয়। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। পুলিশ এসে আটকালো বিয়ে। শেষমেষ গ্রেপ্তার হলো কনের বাবা-মা! কিন্তু কেন ? জানা গিয়েছে, গতকাল শনিবার (১৯.০৪.২০২৫) পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবং ব্লকের অন্তর্গত ১৩ নম্বর বিষ্ণুপুর অঞ্চলের মাধবচক গ্রামের বাসিন্দা মধুসূদন বর্মনের মেয়ে দশম শ্রেণীর ছাত্রী। তার মেয়ের সঙ্গে উক্ত অঞ্চলের বুদ্ধদেব বর্মনের ১৮ বছর বয়সী ছেলের বিয়ের ব্যবস্থা করা হয় দুই পরিবারের সম্মতিতে।
স্থানীয় মন্দিরে গোপনে ওই নাবালক এবং নাবালিকাকে নিয়ে বিয়ে সেরে ফেলে পরিবারের সদস্যরা। এরপর সামাজিক রীতি মেনে জগন্নাথ চক এলাকায় ছেলের পরিবারের পক্ষ থেকে বিয়ের প্রীতিভোজের আয়োজন করা হয়। গতকাল শনিবার পাত্রের বাড়িতে যখন প্রীতিভোজ চলছিল। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে, সবং থানার পুলিশ গিয়ে প্রীতিভোজের অনুষ্ঠান থামায়। কারণ ? পাত্র নাবালক ও পাত্রী নাবালিকা। আর ভারতীয় আইন অনুসারে সাবালক এবং সাবালিকা না হলে বিয়ে বৈধ নয়। বিয়ের আসর থেকে নাবালিকা উদ্ধার করে পুলিশ।
সবং থানার পুলিশ ব্লক সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক-শিশু উন্নয়ন প্রকল্প কর্মকর্তা ও অফিসের কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ওই নাবালিকার বিয়ের প্রীতিভোজ আসরে পৌঁছায়। প্রথমে পাত্রীকে উদ্ধার করা হয়। এরপরে তার পরিবারের লোকেদের কম বয়সে মেয়ের বিয়ের ক্ষতি সম্পর্কে অবহিত করে প্রশাসনের আধিকারিকরা। রাতে ওই মেয়েটিকে হোমে পাঠানো হয়। এদিকে পাত্রীর মা এবং বাবাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ধৃতদের নাম মধুসূদন বর্মন ও পদ্মাবতী বর্মন। বাড়ি বিষ্ণুপুর অঞ্চলের মাধবচক এলাকায়। পুরোহিত কে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলে জানা গিয়েছে। ধৃতদের রবিবার মেদিনীপুর জেলা আদালতে তোলা হবে বলে জানা গিয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, খবর পেয়ে ওই এলাকায় ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকদের নিয়ে যাওয়া হয়। পরিবারের সদস্যদের বোঝানোর পরেও ওই নাবালক-নাবালিকাকে বিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে শিশু উন্নয়ন প্রকল্প কর্মকর্তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে। শনিবার নাবালিকার বাবা মাকে গ্রেফতার করা হয়। তবে পুলিশ পৌঁছানোর খবর পেয়ে অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে চম্পট দেয় ছেলের পরিবারের সদস্য সহ আত্মীয়রা। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি ওই বিয়েতে যারা ইন্ধন জুগিয়ে ছিল এবং প্রীতিভোজ নিমন্ত্রণে গিয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে প্রশাসন সূত্রে। প্রসঙ্গত, জেলা প্রশাসনের বাল্যবিবাহ রুখতে একাধিক প্রচার করার পরেও কেন সম্ভব হচ্ছে না বাল্যবিবাহ রোখা ? তা নিয়ে ইতিমধ্যে উঠছে প্রশ্ন। পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত ভর্তি হয়েছিলেন ৬৪,৯৯৮ জন অন্তঃসত্ত্বা। প্রশাসনের সূত্রে খবরে যে তথ্য উঠে এসেছে তার মধ্যে নাবালিকা ১১,৫৬১ জন। আর ১,১৩০ জনের বয়স পনেরোর কম। ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সি ১০,৪৩১ জন। ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৫৭,৪০১ জন অন্তঃসত্ত্বা। এর মধ্যে নাবালিকা ৯,১৩৯ জন। অনূর্ধ্ব- ১৫ ২০৩ জন। ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সি ৮,৯৩৬ জন।
Sabang News: বিয়ের প্রীতিভোজের সময়ই হাজির পুলিশ, অনুষ্ঠানের আসর থেকেই সোজা ‘হোমে’ গেলেন কনে! গ্রেফতার ২
