Top News' আমার মৃতদেহ নিতে হলে এখানে এস।' স্ত্রীর ফোনে মেসেজ স্বামীর! তারপর...

‘ আমার মৃতদেহ নিতে হলে এখানে এস।’ স্ত্রীর ফোনে মেসেজ স্বামীর! তারপর ?

SBN NEWS: সন্ধ্যা তখন ৭টা ৩৯ মিনিট। স্ত্রী লিখিতা লাবণ্যর ফোনে একটি মেসেজ এল। যেখানে লেখা হয়েছিল ‘ আমার মৃতদেহ নিতে হলে এখানে এস।’ তারপরেই ফোন বন্ধ হয়ে যায়। আর সেই মেসেজ পৌঁছানোর ঘন্টা খানেকের মধ্যে লিখিতাদেবী স্বামীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর পেলেন। তারপর থেকেই যাবতীয় রহস্য তৈরি হয়েছে। বাসস্থান কলকাতার চেতলা এলাকার একটি ফ্ল্যাটে। কর্মস্থল গার্ডেনরীচ।

অথচ দ্বি খন্ডিত মৃতদেহ পাওয়া গেল কর্মস্থল থেকে ১৪২ কিমি দূরে খড়গপুর মেদিনীপুর রেলশাখার রাজগ্ৰাম রেলগেট থেকে একটু দূরে রেললাইনের উপর থেকে। ফলে ব্যাপক রহস্য তৈরি হয়েছে অবিভক্ত দক্ষিণ পূর্ব রেলওয়ের কর্মচারী সমবায় ব্যাঙ্কের ডেপুটি চিফ ম্যানেজার ইয়েরা সাস্থা স্বরূপের মৃতদেহ উদ্ধারকে কেন্দ্র করে। খড়গপুর জিআরপি শুক্রবার রাতেই রেললাইনের উপর থেকে ৩০ বছর বয়সী রেলের এই আধিকারিকের দ্বি খন্ডিত মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। রেল পুলিশ জানিয়েছে মৃতের বাড়ি অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের বিশাখাপত্তনম জেলার পেনডুরথি থানার কৃষ্ণনগর এলাকায়।

মাত্র এক বছর দুই মাস আগে তিনি গার্ডেনরীচে অবিভক্ত দক্ষিণ পূর্ব রেলওয়ের কর্মচারী সমবায় ব্যাঙ্কের ডেপুটি চিফ ম্যানেজার হিসাবে যোগদান করেন। বাড়িতে তাঁর স্ত্রী ও চার বছরের এক কন্যা সন্তান রয়েছেন। ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। রহস্য তৈরি হয়েছে স্ত্রী থেকে শুরু করে সহকর্মীদের মনে। রেল পুলিশ জানিয়েছে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। আপাতত একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে জিআরপি মৃতের দুটি মোবাইল ফোন ও একটি হাত ঘড়ি হেফাজতে রেখেছে।

রেল পুলিশ জানিয়েছে রেললাইন পারাপার করার সময় মেদিনীপুর থেকে হাওড়া গামী একটি লোকাল ট্রেনের ধাক্কায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে। যদিও এই মৃত্যু নিয়ে পরিবারের সদস্যরা সহ সকলেই সন্দিহান। সকলের মধ্যে একই প্রশ্ন বাড়ি কিংবা কর্মস্থল থেকে এত দূরে কিভাবে তিনি পৌঁছালেন। আর এত দূরেই এসে আত্মহত্যা করলেন কেন। তবে ঘটনার আগে শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা ৩৯ মিনিটে এই আধিকারিক নিজের ফোন থেকে স্ত্রীকে রাজগ্ৰাম এলাকার লোকেশন দেখিয়ে একটি মেসেজ করেন। যেখানে ইংরাজীতে লেখা ছিল ‘আমার মৃতদেহ নিতে হলে এখানে এস।’ ফলে এই নিয়েও রহস্য তৈরি হয়েছে। তারসাথে রহস্য আরও ঘনীভূত হয়েছে এই আধিকারিকের বাইকটির কোনও হদিস না হওয়ায়।

জানা গিয়েছে শুক্রবার দুপুর দুটোয় মধ্যাহ্ন বিরতির সময় অফিস থেকে বাইক নিয়ে বেরিয়ে যান এই আধিকারিক। যাওয়ার সময় তিনি চিফ ম্যানেজার অভিজিৎ বন্দোপাধ্যায়কে বলে যান ব্যাঙ্কে যাচ্ছেন। তারপর থেকে আর ফেরেন নি অফিসে। এদিকে অফিস থেকে বেরোবার আগে তিনি স্ত্রীর সঙ্গে কথাও বলেন। যদিও সেটাই শেষ কথা। কিন্তু সেই সময় তাঁকে পুরোপুরি স্বাভাবিক লাগছিল। কোনও অস্বাভাবিকতা দেখা যায় নি তাঁর আচরণের মধ্যে। এমনটাই জানালেন মৃতের এক সহকর্মী কৃষ্ণেন্দু পাল। এমনকি অফিস থেকে বেরোবার সময় তাঁর টেবিলের ল্যাপটপ খোলা অবস্থায় ছিল। ফলে সকলেই ভেবেছিলেন কোনও কাজে হয়ত বেরিয়েছেন। সময় মতো চলে আসবেন অফিসে। কিন্তু অফিস টাইম শেষ হওয়ার পর সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় তিনি অফিসে না আসায় সকলেই চিন্তিত হয়ে পড়েন।

শুরু হয় খোঁজখবর নেওয়া। তার মধ্যেই সন্ধ্যা ৭টা ৩৯ মিনিটে স্ত্রীর ফোনে ওরকম একটি মেসেজ পৌঁছানোর পর সকলেই চিন্তিত হয়ে পড়েন। পরে রাতে খবর পাওয়া যায় এই আধিকারিকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা। এই ব্যাপারে মৃতের স্ত্রী লিখিতা লাবণ্য গোটা ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করে বললেন ” আমি জানি না কি হয়েছে। আর এতদূরে এসেই বা কেন আত্মহত্যা করবে। আমি রেল পুলিশকে বলেছি ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করার জন্য। আমার সঙ্গে দুপুর দুটোয় কথা হয়েছে। তখন অত্যন্ত স্বাভাবিক লেগেছে। কোনও অসঙ্গতি পাওয়া যায় নি। তবে তিনটার পর কি হয়েছে আমি জানি না।” পাশাপাশি তিনি জানালেন তাঁরা খুব সুখী পরিবার ছিলেন। কোথা থেকে কি হয়ে গেল সেটাই তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না। তবে কলকাতা থেকে ১৪৮ কিমি দূরে খড়গপুর শহরের রাজগ্ৰামে এসে তিনি কেন আত্মহত্যা করলেন সেই রহস্যের উন্মোচন চাইছেন বাবা ইয়েরি নাগরাজু সহ সকলেই। তবে এই ঘটনার সঙ্গে কর্মস্থলে কোনও কিছুর যোগ নেই বলে দাবি করলেন মৃতের সহকর্মী কৃষ্ণেন্দু পাল।

তিনি বললেন ” আমরা বুঝতে পারছি না খড়গপুরে কি করে এই ঘটনা ঘটল। কারন খড়গপুর শহর তিনি চেনেন না। এই শহরের সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক বা যোগাযোগ ছিল না। পুলিশ ঠিকমত তদন্ত করলে আশা করি সবকিছু স্পষ্ট হয়ে যাবে। আমরা চাই এই রহস্যের উন্মোচন।” এদিকে এইদিন খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর ছেলের মৃতদেহ নিয়ে বাবা নাগরাজু অন্ধ্রপ্রদেশের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। ছেলের এরকম অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় তিনি কার্যত হতভম্ব হয়ে পড়েছেন।